রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন ও শেখ মুজিবুর রহমান

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা - ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ | NCTB BOOK

১৯৪৭ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স ছিল ২৭ বছর। তরুণ ও আদর্শিক নেতা শেখ মুজিব পূর্ব-বাংলার অধিকার সংশ্লিষ্ট এবং ন্যায়সঙ্গত সকল আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় থাকতেন। বিষয়টি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরও চোখ এড়ায়নি। ফলে সামনের সারির প্রবীণ নেতাদের রেখে গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানের উপর সে সময়ের পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের গোপননথি নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্যা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান' ১ম ও ২য় খণ্ড। প্রথম খণ্ডটির সময়কাল ১৯৪৮-১৯৫০ এবং দ্বিতীয় খণ্ডটির সময়কাল ১৯৫১-১৯৫২। বই দু'টোর গোয়েন্দা রিপোর্টেই ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিবের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট।

১৯৪৮ সালের ২ মার্চ, বাংলা ভাষা-বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তমদ্দুন মজলিশ ও মুসলিম লীগের যৌথ সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এখানে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান । ৪ মার্চ ঢাকা জেলা গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমানসহ যারা মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনে কাজ করেছে তারাই বাংলাকে পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে লিফলেট ছড়াচ্ছে' । ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। ১১ মার্চের হরতাল কর্মসূচি চলাকালে তিনি গ্রেফতার হন। মোনায়েম সরকার সম্পাদিত বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি' শীর্ষক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীন পাকিস্তানের রাজনীতিতে এটিই তাঁর প্রথম গ্রেপ্তার।

গোপন দলিলের ২৭ নং এন্ট্রিতে ১৯৪৯ সালের ৯ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কয়েকটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে 'আদালতের ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ ও চালু করার বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর একাধিক ভাষণে জোর দিয়েছেন।’ জাতীয় নেতা সোহরাওয়ার্দীর উর্দুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি (২৯ জুন, ১৯৫২, ইত্তেফাক) বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সে সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাষা সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ায় আমরা বেশ অসুবিধায় পড়ি। তাই ঐ বছর জুন মাসে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য করাচি যাই এবং তাঁর কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বাংলার দাবির সমর্থনে তাকে একটি বিবৃতি দিতে বলি।' তিনি সোহরাওয়ার্দী মিশনে সফল হয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় মওলানা ভাসানীর একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেন, “বাংলা ভাষার পক্ষে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত পরিবর্তনে মুজিব সক্ষম না হলে শুধু ভাষা আন্দোলন নয়-আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তো।”

অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ভাষার অধিকার চেয়ে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, এরপর আর থেমে থাকেননি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । আমৃত্যু তিনি বাংলা ভাষার গৌরব ও মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর প্রথম বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা দেন ।

Content added By
Promotion